সিউল!এই নামটা শুনলে এখনো অনেকটা স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাই!এখানে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই শহর নিয়ে ছিল হাজারো কৌতুহল!বিশ্বের ব্যস্ততম শহরের মাঝে সিউল শহর যে অন্যতম তা বলার অপেক্ষা রাখে না!এমনকি জীবন-যাপনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী খরচ হওয়া শহরের তালিকায়ও এই সিউল শহর রয়েছে!অত্যাধুনিক এই শহরের প্রতিটি স্থানে মিলবে আলাদা আলাদা স্বাদ!কোন না কোন উপায়ে আজ এই শহরেই আমার বসবাস!সময় সুযোগ পেলেই এই শহরের আনাচে-কানাচে খুঁজে বেড়াই রুপের মায়া!
আমি যেহেতু পাহাড় একটু বেশী পছন্দ করি সেক্ষেত্রে এই শহরটা আরো বেশী পছন্দের হয়ে উঠেছে আমার কাছে!কারন সিউল শহরের আশেপাশে ছোট ছোট পাহাড়ের অভাব নেই!পাহাড়ে ঘেরা এই শহর কল্পনার মত সুন্দর!আমার নিজের অভিজ্ঞতায় এই শহরের মূল আকর্শন নিজ চোখে দেখার জন্য কম করে হলেও ৩-৪ দিজ লেগে যাবে!তবুও যাদের হাতে খুব কম সময় থাকবে বা কেউ যদি একদিনের ট্রানজিটে সিউল শহরে অবস্থান করে থাকে,তাহলেতাদের জন্য আমি কিছু দর্শনীয় স্থানের বিস্তারিত বলতে পারি যাতে তারা অল্পের মদ্ধ্যে সিউল শহরের স্বাদ পায়!
আপনি যদি একদিনের জন্য এই শহরে অবস্থান করেন তাহলে খুব সহজেই নিচের স্থানগুলি এক্সপ্লোর করতে পারবেন!
প্রতিটি স্থানে ১-১.৩০ ঘণ্টা করে কাটালে মোটামুটি ভাবে এই স্থানগুলির স্বাদ পাবেন আশা করি!আর সিউল সাবওয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক উন্নত!তাই যাতায়াতে সময় খুব কম লাগবে!একটা ট্রেনের পর আরেকটা ট্রেন আসতে ৩-১৫ মিনিট লেগে থাকে!
আর এখানে আসার পূর্বে কিছু এপ্স সম্পর্কে জেনে থাকলে অনেকটা সময় বাঁচাতে পারবেন আশা করি!সিউলের মাস্ট নিডেড এপ্স সম্পর্কে জানতে apps is south korea
এখানে যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে এটা প্রতি মঙ্গলবার বন্ধ থাকে!সিউলে অবস্থিত ৫টি রাজপ্রাসাদ থেকে সবচেয়ে বড় হচ্ছে গিইংবোকগুং প্লেস!১৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মীত এই রাজপ্রাসাদ ছিল জেসন সম্রাঞ্জের প্রাসাদ!বিশাল এড়িয়া নিয়ে বিসৃত এই প্লেসে প্রায় ৫০০ টির মত ভবন রয়েছে যার আয়তন প্রায় ৪০ হেক্টরের মতন!তাই এই সল্প সময়ে সবকিছু দেখা সম্ভব নয়!তবে কিছু কিছু ঐতিহাসিক রাজপ্রসাদ,পুকুর আর সংস্কৃতি খুব সহজেই দেখা যাবে!
এখানে গিয়ে যা উপভোগ করা যাবে:-
১:-সকাল ১০টা আর দুপুর ২টার আগে গেলে ২০ মিনিটের রাজকীয় মহরা দেখা যাবে!
২:-ঐতিয্যবাহী রাজকীয় পোষাকের অনুভূতি নেয়া যাবে!
৩:-রাজকীয় নিদর্শনের সাক্ষী হতে পারবেন,জানতে পারবেন প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে!
সময়:-9am to 5/6 pm!
মঙ্গলবার বন্ধ!
ঠিকানা:-161, Sajik-ro, Jongno-gu, Seoul
서울특별시 종로구 사직로 161 (세종로)
যোগাযোগ:-82-2-1330
ওয়েবপেজ:-www.royalpalace.go.kr
যাতায়াত:-সিউল সাবওয়ের Gyeongbokgung স্টেশনের এক্সিট ৩ অথবা Anguk স্টেশনের যেকোন এক্সিট দিয়ে বের হলেই দেখা মিলবে![the_ad id=”1615″]
গিওংবোকগুং(Gyeongbokgung)আর হাংদেওকগুং(hangdeokgung)রাজকীয় প্রাসাদ এড়িয়ার সংলগ্ন এই গ্রামটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম প্রাচীন গ্রাম!যা জেসন সম্রাজ্ঞ আমলের স্মৃতি বহন করে!সল্প সময়ে এ দেশের পুরাতন সংস্কৃতি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এইজায়গায় ভীড় করে থাকে!অনেকে ঐতিয্যবাহী “হানবোক” ট্রেডিশনাল পোষাক পরে এই গ্রামের অলিগলিতে বিচরণ করে এই দেশের সংস্কৃতির স্বাদ গ্রহন করে থাকেন!এখানে রয়েছে হাজারো প্রাচীন বাড়িঘর,যার নির্মানশৈলী এক কথায় অসাধারণ!পর্যটকগন এখান থেকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদও পেতে পারেন!এছাড়া এই গ্রামে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতাও নেয়া যাবে!
সময়:-সারাবছর সকলের জন্য উন্মুক্ত এই ভিলেজ!
ঠিকানা:-37, Gyedong-gil, Jongno-gu, Seoul!(서울특별시 종로구 계동길 37 (계동)
যোগাযোগ:-82-2-1330
ওয়েবপেজ:-www.hanok.seoul.go.kr
যাতায়াত:-সাবওয়ের লাইন নং ৩ এর anguk স্টেশনের ১/২ এক্সীট দিয়ে বের হয়ে ৩০০ মিটার এর মত হেটে গেলেই hanok village এ পৌছানো যাবে!
নামদেমুন হচ্ছে একটি লোকাল বাজার!যা এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে এমনকি প্রতিটি বিদেশী আর পর্যটকদের কাছে বেশ সুপরিচিত!এই বাজারে নিত্যপ্রয়োজন সকল প্রকার জিনিষের খোজ মিলবে খুব সহজেই!কাপর,কসমেটিক্স,জুতা, এক্সোসরিজ এর সমাহার ছাড়াও লোকাল খাবারের কয়েক হাজার দোকান রয়েছে!অনেকটা বাংলাদেশের বঙ্গবাজারের মত এই বাজার!নতুন থেকে শুরু করে পুরাতন সকল প্রকার জিনিষ এখানে মিলবে!তবে এখান থেকে কিছু কিনতে হলে দামাদামি করাতে অভিজ্ঞ হতে হবে!নয়তো কমদামী জিনিষ বেশী দামে কিনে ফেলতে পারেন!
সময়:-রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সবসময় খোলা থাকে,তবে বিভিন্ন দোকানের নিয়মানুযায়ী সময় নির্ভর করে থাকে!
ঠিকানা:-21, Namdaemunsijang 4-gil, Jung-gu, Seoul(서울특별시 중구 남대문시장4길 21 (남창동)
যোগাযোগ:-82-2-1330!
ওয়েবপেজ:-www.namdaemunmarket.co.kr(মাল্টি ল্যাংগুয়েজ)
যাতায়াত:-সিউল সাবওয়ের ৪ নং লাইনের Hoehyeon স্টেশনের ৫/৬ নাম্বার এক্সিট দিয়ে বের হলেই এই মার্কেটের প্রবেশ পথ মিলবে![the_ad id=”1605″]
নামদেমুন এর মত মিওংদোং ও সকলের কাছে বেশ সুপরিচিত!লোকাল স্ট্রিট ফুডসহ বিশ্বের সকল প্রকার নামীদামী ব্রান্ডের পণ্য খুব সহজেই মিলবে এই বাজার থেকে!এই স্থানটি বিদেশীদের কাছে বেয়াস জনপ্রিয়!বিশেষ করে আড্ডা দেয়ার জন্য কোরিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম স্থান এটি!আর ফ্যাশনসম্মত জিনিষপত্রের জন্য এই এড়িয়ার সুনাম রয়েছে অনেক!দোকানপাট ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন এক্সিবিশন সেন্টার,সিনেমা হল, ক্যাফেটেরিয়া,লাইব্রেরী!মিওংদোং থেকে হেটে হেটেই নামদেমমুন বাজারে যাওয়া যাবে!তাছাড়া নামসান টাওয়ার এখান থেকে খুব কাছেই!
খরচ:-ব্যান্ডের দোকান ছাড়া লোকাল দোকানগুলি থেকে খুম কমদামে জিনিশপত্র ক্রয় করা যাবে!বিশেষ করে স্ট্রিট ফুডের দাম তুলনামূলক খুব কম!
সময়:-দোকানের নিয়মানুযায়ী সময় পরিবর্তনশীল!তবে সারাবছর ২৪ ঘণ্টা এই জায়গা সকলের জন্য উন্মুক্ত!
ঠিকানা:-Myeongdong-gil, Jung-gu, Seoul!(서울특별시 중구 명동길 (명동1가)
যোগাযোগ:-82-2-1330
ওয়েবপেজ:-www.tour.junggu.seoul.kr
যাতায়াত:-সিউল সাবওয়ের Myeongdong স্টেশনের ৬ নাম্বার এক্সিট
অথবা Euljiro 1-ga স্টেশনের ২ নাম্বার এক্সিট দিয়ে বের হলেই এখানে যাওয়া যাবে![the_ad id=”1618″]
১৯৬৯ সালে নির্মান করা হয় এই টাওয়ারটি লোকাল ভাবে এটা সউল টাওয়ার হিসেবেই পরিচিত!টাওয়ার টি মুলত একটি টিলার এর উপরে নির্মিত।টাওয়ারটির উচ্চতা প্রায় ২৩৭ মিটার,আর টিলার উচ্চতা প্রায় ২৪৩ মিটার!টাওয়ারটি সিউল এর আশেপাশ এবং অনেক দূরের ছোট-বড় টিলা থেকেও খুব ভাল করেই দেখা যায়!এতটাই সুন্দর যে না দেখলে বুঝানো যাবে না!রাত হলে পুরো টাওয়ারটাকে হরেক রকম আলো দিয়ে সাজানো হয়,যা আপনার মনকে ভরিয়ে দিবে!এই টাওয়ার শুধু সিউল নয় সম্পূর্ণ দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম আকর্শণ!সবসময় এইখানে পর্যটকদের জনসমাগম থাকে!
খরচ:-ক্যাবল কার(cable car)
one way-৩০০০(শিশু)৬০০০(বড়)
round-৫০০০(শিশু)৮০০০(বড়)
টাওয়ার প্রবেশ ফি (Observatory):-৯০০০(বড়) ৫০০০(শিশু)
(সময় 10am-23pm)
খাবার:-টাওয়ারের উপর কফিসপ, প্রস্ট্রিসপ আছে!দাম তুলনামূলক একটু বেশী
ঠিকানা:-105, Namsangongwon-gil, Yongsan-gu, Seoul(서울특별시 용산구 남산공원길 105 (용산동2가)
যোগাযোগ:-8223783-5900/ 822753-0108
কিভাবে যাবেন::-দক্ষিণ কোরিয়ার গিওংগি দো প্রদেশের মেট্রোরেলের Myeongdong/hoehyeon স্টেশনে নেমে ১৫ মিনিট হাটলেই ক্যাবল কার/হাটার রাস্তা পাওয়া যাবে![the_ad id=”1615″]
নামসান টাওয়ার সম্পর্কে আরো জানতে namsan
ইয়্যুদো হানগাং পার্ক মূলত একটি খোলা উদ্দ্যান!যা হানগাং কে (হান নদী)কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে!হানগাং(han river) হচ্ছে এই দেশের একমাত্র নদী যা সম্পূর্ণ দেশ জুরে বিসৃত!১৯৮০ সাল থেকে এ নদীর পুঃসংস্কার শুরু হয় যা প্রতিনিয়ত এই নদী আর আশপাশের দৃশ্য আরো বেশী ফুটিয়ে তুলছে!দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে পর্যটকদের ভীড় থাকবে!এখান থেকে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা যাবে খুব কাছ থেকে!বহমান নদীর জলধারা,সুবিশাল দালানকোঠা,ব্রিজসহ সকল কিছুর সুন্দর ভিউ এখান থেকে পাওয়া যাবে!
এখানে সল্প সময়ে কি কি অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন?
১:-৮০ কিঃমিঃ দীর্ঘ রাস্তায় সাইক্লিং এর স্বাদ!এখানে ভাড়ায় চালিত সাইকেল পাওয়া যায়,যা সয়ংক্রয় মেশিনের মাদ্ধ্যমে পাওয়া যাবে!
২:-হেটে হেটে এই নদী আর চারপাশের সেনিক ভিউ দেখা যাবে!কতটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে এই স্থানটিকে!
কৃত্তিম ফোয়ারা আর জলধারার দেখা মিলবে যা সরাসরি নদীর সাথে সংযুক্ত!
৩:-গরমের সময় এই নদীর তীরে অবস্থিত
কৃত্তিম পুলে সুইমিং করার স্বাদ পাওয়া যাবে!বিশেষ করে Nanji Han River Infinity Pool এ![the_ad id=”1661″]
৪:-ফেরী বা বোটে করে নদীতে ভ্রমণ করা যাবে!উপলব্ধি করা যাবে বিশুদ্ধ বাতাসের ঘ্রাণ!
৫:-পিকনিক এর জন্য এই নদীর পাড় অনেক জনপ্রিয়!নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসের মেঝেতে হাজারো মানুষের দেখা মিলবে যারা দলবেঁধে এখানে পিকনিকের জন্য আসেন!বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে এখানে থাকে উপচেপরা ভীড়!
৬:-ফ্রি স্টাইলে ক্যাম্পিং করার জন্য অনেকটাই উপযুক্ত স্থান এই নদীর পাড়!
পার্ক অফিস থেকে ক্যাম্পিং থেকে ক্যাম্পিং সরঞ্জামাদি ভাড়া নিয়ে এখানে ক্যাম্পিং এ অভিজ্ঞতাও মিলবে!
খরচ:-এখানে প্রবেশের জন্য কোন খরচ নেই!তবে সাইকেল ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় উওন করে দিতে হবে!
সময়:-বছরের ৩৬০ দিন ২৪ ঘণ্টা এই পার্ক সকলের জন্য উন্মুক্ত!!
খাবার:-এখানে হাজারো লোকাল স্ট্রিট ফুডের দোকান পাওয়া যাবে!যা অনেক কম মূল্যের মদ্ধ্যেই ক্রয় করা সম্ভব!
ঠিকানা:-330, Yeouidong-ro, Yeongdeungpo-gu, Seoul!
서울특별시 영등포구 여의동로 330 (여의도동)
যোগাযোগ:-82 2-3780-0561
যাতায়াত:-এখানে যাওয়ার জন্য অনেকগুলি পথ রয়েছে!
সিউল সাবওয়ে National Assembly স্টেশনের ২/৩ এক্সিট!
yeouinaru স্টেশনের ২/৩ এক্সিট!
Yeouido স্টেশনের ৪ নাম্বার এক্সিট দিয়ে বের হলেই এই পার্কে যাওয়া যাবে!