ডিজনি ওয়ার্ল্ড চারটি থিম পার্ক, চারটি গলফ কোর্স, প্রায় ২৭টি থিম রিসোর্ট, শপিং ডিসট্রিক্ট, একটি ক্যাম্পিং রিসোর্ট আরো হাজারো বৈচিত্র নিয়ে ২৭,২৫৮ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই সুবিশাল থিম পার্ক। দ্যা হ্যাপিয়েস্ট প্লেস অন আর্থ।
আসলে ডিজনি চেয়েছিলেন এমন একটি দুনিয়া তৈরি করতে যেখানে পা রেখে সব বয়সের মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ কষ্ট ভুলে প্রবেশ করবে এক স্বপ্নের জগতে। ক্লাসিক রাইড, বিভিন্ন রকম বিনোদন এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে যার ছোয়া বোধহয় পৃথিবীর আর কোন থিম পার্কে পাওয়া সম্ভব নয়। আর তাই অনলাইনে টিকিট কাটার সময় থেকে শুরু করে ডিজনি এক্সপ্রেসে করে ডিজনি রিসোর্টে চেকিং করার সময় থেকে শুরু করে মিষ্টি সকালের নরম রোদ্দুরে ম্যাজিক কিংডমে ঢোকার সময়- ম্যাজিক মর্নিং, ম্যাজিক আফটার নুন, ম্যাজিক নাইটের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ম্যাজিক কিংডমে প্রবেশ করে প্রথমে সেদিন আমাদের মনে হয়েছিল যেন কোন এক জাদুশক্তি বলে হঠাৎ কোন এক রূপকথার জগতে এসে উপস্থিত হয়েছি। এমনকি আমাদের ডিজনি রিসোর্ট হোটেলের সর্বত্র ছড়ানো মিকি মাউসের চেহারা, ওয়াল পেপার, শাওয়ার কার্টুনে, বেড কভারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ম্যাজিক কিংডমে ৬টি থিমল্যান্ডেই অজ¯্র রোমাঞ্চকর এ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ।
প্রায় প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন আকর্ষনের সম্ভারে ক্রমাগত নিজেকে আপগ্রেড করে চলেছে এই বিখ্যাত থিম পার্কটি। আমাদের সামনেই সর্পিল গতিতে এগিয়ে যাওয়া সচল মেইন স্ট্রিট সদর্পে ছুয়েছে ম্যাজিক ক্যাসেলের মোহময় অবস্থিতি। বিংশ শতাব্দির প্রথম ভাগের মিজোরির মার্সোলিন এই সময়কার ট্রপিক্যাল ডেকোরেশনে সাজানো এই মেইন স্ট্রিট এর দুই ধারে অসংখ্য দোকান। মেইন স্ট্রিট এর প্রধান আকর্ষন ৩ ফিট ন্যারো ডিজনি ওয়ার্ল্ড, রেল রোড, ন্যারো গেজ ট্রাম, ঘোড়ায় টানা স্ট্রিটকার, চারপাশে ঘুরে ফিরে বেড়ানোর নানা ওল্ড ফ্যাশনের গাড়ি দেখতে পাবেন।
১৮৯ ফুট উচু সিন্ডারেলা ক্যাসেলের সামনেই ওয়ার্ল্ড ডিজনি আর মিকি মাউসের স্ট্যাচু। ফ্রন্টিয়ার ল্যান্ড বা আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে পৌছানোর পথে হঠাৎ আকাশ জুড়ে বেগুনি মেঘ করে ঝিরঝিরিয়ে যেন মেক্সিকান পেটুনিয়ার পার্পল শাওয়ার শুরু হয়ে গেল। ফ্লোরিডার এই অঞ্চলে ক্রান্তীয় আবহাওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে মাঝে মাঝে ঝুপঝাপ বৃষ্টি নামে।
ফ্রন্টিয়ার ল্যান্ডের রোলার কোষ্টার রাইড বিগ থান্ডার মাউন্টেইন রেলরোডের গায়ের লোম খাড়া করা উত্তেজনা ফিকে হতে না হতেই বøাস মাউন্টেইন রাইডের জলীয় উন্মাদনা। এরই ফাকে উপভোগ করতে পারেন লিবার্টি স্কয়ারে পাকা কুড়ি মিনিটের রিল্যাক্সিং রিভার বোর্ড রাইডের আনন্দ। এরপর রাজকন্যা, ক্যাসেল, পিটার প্যান, লিটিল মারমেইড, ডাম্বের দুনিয়া।
শিশু ভাবনামূলক স্বপ্নিল ফ্যান্টাসি ল্যান্ডে ম্যাড রিসোর্টের পাগলামি এবং ডোয়ারস মাইন ট্রেন নামের রোলার কোস্টারের ভয়ানক শিরশিরানি। দুপুরের আকাশ তখন মাথার উপর রোদ্র ছায়ায় লুকোচরি খেলা করে চলেছে। আর তার মাঝেই উজ্জল টুমরো ল্যান্ডের অদূর ভবিষ্যতে টাইম ট্রাভেল করতে পারেন।
রকেট, স্পেস, ট্রাভেল, ইউ,এফ,আর রকেটের দুনিয়ায় অজানা ছায়াপথে টুমরো ল্যান্ড স্পিডওয়ে, স্পেস মাউন্টেইন, অ্যাক্টো অরবিটের হরেক রকম চুম্বকীয় স্পেস রাইডের হাতছানি। বিকেলের হলুদ কমলা রাঙা লাজুক সূর্যটা টুপ করে সিদুর ছড়ানো কফি। লাইট এন্ড সাউন্ড শোর শেষে রাতের ক্লান্ত ভারি আকাশটাকে চমকে দিয়ে ফুটে উঠতে শুরু করেছে। চোখ ঝলসানো আলোর রোশনাই- অসাধারন ফায়ার ওয়ার্ল্ডের চমকপ্রদ প্রদর্শনী। ডিজনির কমপ্লিমেন্টারি বাসে করে ভ্রমনের পরিতৃপ্তি আপনার সারাটি জীবন মনে থাকবে।
পরের দিন যেতে পারেন এনিমেল কিংডম। ৫০০ একর জায়গা জুরে এর অবস্থান। ৭টি থিম এরিয়া নিয়ে পার্কটি গঠিত- ওয়েসিস, ডিসকভারি আইল্যান্ড, আফ্রিকা, প্ল্যানেট ওয়ান, এশিয়া, ডাইনোল্যান্ড (ইউএসএ) আর ক্যাম্প মিনিমিকি।
পার্কের হৃদস্পন্দন অনুভব করা যায় ডিসকভারি আইল্যান্ডে যেখানে ডালপালা ছড়িয়ে আকাশ ছুয়েছে ১৪৫ ফুট উচু সুবিশাল দ্যা ট্রি অফ লাইফ, প্রানবন্ত কৃত্রিম গাছটিই এই পার্কের প্রতীক ল্যান্ডমার্ক।
এরপর শুরু করতে পারেন কিলিমানজ্যারো সাফারি এ্যাডভেঞ্চার। কৃত্রিমভাবে তৈরি আফ্রিকান সাভানা, সুবিশাল আফ্রিকান হাতি, শক্তিশালি কালো গন্ডার, জেব্রা, জলহস্তি, জিরাফ, পেলিক্যান, সাদা গন্ডার দেখতে পাবেন এখানে। এরপর এশিয়ার কিংডম অফ আনন্দপুর অঞ্চল ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ অনুভব করুন।
এশিয়ার এক্সপিডিশন এভারেষ্টের বিপদজনক প্রাচীন ভাঙাচোরা টি ট্রেন রোলার কোষ্টারে রোমাঞ্চকর ভ্রমন আপনার চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। আসলে ডিজনীর এই থিম পার্কগুলো এন্টারটেইনমেন্টের মোড়কে আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
ঢাকা থেমে নিউইয়র্ক হয়ে অরল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্ট থেকে ডিজনী ম্যাজিকেল এক্সপ্রেস আপনাকে পৌছে দিবে পছন্দের ডিজনি রিসোর্টে। ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ডের এরিয়ার মধ্যেই রয়েছে ডিলাক্স রিসোর্টস, মডারেট রিসোর্ট আর ভ্যালু রিসোর্ট।
শীতকাল বাদ দিয়ে সারা বছরই যেতে পারেন ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ডে। তবে সব থেকে ভাল সময় গরমে আর বসন্তকালে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ এখানে বর্ষাকাল। এই সময় বৃষ্টির কারনে আনন্দ মাটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সময় এখানে না যাওয়াই ভালো।
সানগøাস, হ্যাট, কেডস সাথে রাখবেন। এখানে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আপনার সারাজীবন মনে থাকবে এবং বারবার এখানে আসতে মন চাইবে।
লেখক: সানজিদ সেইহিম হক