পুরো ইউরোপ ঘুরে যত দেশ দেখেছি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা অথচ একদম প্রাণবন্ত দেশটি আমার কাছে লেগেছে মলদোভা (Moldova)। এই দেশটায় পা রাখার পর থেকেই যেন মনে হয়েছে, ইউরোপের এক ভিন্ন জগতের দরজা খুলে গেছে। এখানে ইউরোপীয় আভিজাত্যের ছোঁয়া আছে, কিন্তু পশ্চিম ইউরোপের মতো দামি বা ব্যস্ততার ছাপ একদমই নেই।
চিসিনাও (Chișinău) শহরেই ছিলাম কয়েকদিন। শহরটা খুবই ছোট, তবে অদ্ভুতভাবে শান্ত। রাস্তাঘাটে যানজট নেই বললেই চলে, মানুষজন ধীরে-সুস্থে হাঁটে, কথা বলে, কাজ করে যেন কেউ কোথাও ছুটছে না। একধরনের লাইডব্যাক লাইফস্টাইল ছেয়ে আছে পুরো শহর জুড়ে। ওদের জাতিও মুদ্রা লেই দেখতেও অনন্য।
সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দেখে আধুনিক, পরিষ্কার, কিন্তু অবিশ্বাস্য সস্তা। একবার শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেলাম বাসে, ভাড়া মাত্র ৬ লেই, মানে ৪০ টাকারও কম! ভাবা যায়?
খাওয়াদাওয়াও একইরকম বাজেট-ফ্রেন্ডলি। এক বেলা ভরপেট খেতে মাত্র ২০০-৩০০ টাকাই যথেষ্ট। স্থানীয় রেস্টুরেন্টে বসে “মামালিগা” বা “প্লাচিন্তা” নামের খাবারগুলো ট্রাই করেছিলাম স্বাদে একদম ঘরোয়া, অথচ নতুনরকম অভিজ্ঞতা। হোটেল ভাড়াও খুব কম, ইউরোপে এরকম দামে পরিষ্কার, আরামদায়ক হোটেল পাওয়া সত্যিই বিরল।
মলদোভায় থাকার সময় মনে হয়েছিল, এখানে জীবনের গতি ধীরে চলে, কিন্তু সেই ধীর গতিতেই একরকম শান্তি আছে। ইচ্ছে ছিলো চিসিনাও থেকে ল্যান্ড ক্রসিং করে ইউক্রেনের দিকে চলে যাব ট্রেনে বা বাসে, সীমান্ত পেরিয়ে কিয়েভ পর্যন্ত যাওয়া যায় সাধারণত খুব সহজেই। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা অন্যরকম। যুদ্ধের কারণে সীমান্ত প্রায় বন্ধ, আর আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে ইউক্রেন সীমান্তের দূরত্ব মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার। সেই ভাবনাটা বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত ভার এনে দিয়েছিল এত কাছে থেকেও যেতে পারলাম না।