1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

ভুটানের পুনাখা শহর

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫

ভুটানের পুনাখা শহর অসাধারণ। থিম্পু শহরে থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। পুনাখার যাওয়ার পথে যাত্রাবিরতি হয়  দোচুলায়। দোচুলা ভুটানিদের পূণ্য ভূমি। অসংখ্য ধর্মীয় নকশাখচিত ছোট ছোট ধর্মীয় পতাকায় দোচুলা ছেয়ে আছে। দোচুলায় মূল আকর্ষণ এখানকার বৌদ্ধমঠ। খাড়া পাহাড়ের উপর বিশাল বৌদ্ধমঠ; বৌদ্ধমঠটি স্থাপত্যশৈলী আর শিল্পশৈলীর নজরকারা স্থাপনা।

রমণার্থী আর পূণ্যার্থীদের ভিড়ে বৌদ্ধমঠটি বেশ জনসমাগম। ভুপৃষ্ট থেকে ১০০৩১ ফুট উচ্চতায় এই দোচুলায় এসে দেখা মিলল ঐ দূরে হিমালয় পবর্তশৃঙ্গের রেখা। দোচুলায় সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দেয় ১০৮টি চরটেন।

২০০৪ সালে ভুটানের জ্যোষ্টতম রাণীমাতা আশী দরযী ওয়াংমো ওয়াংচুক দক্ষিণ ভুটানে আসাম বিদ্রোহে মারা যাওয়া শহীদের স্মরণে এই ১০৮টি চরটেন স্তম্ভ তৈরী করেন। কাঠের তৈরী এই চরটেন গুলোতে বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, ভুটানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পরম স্পর্শ।

দোচুলা থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৪১ কিলোমিটার। কিন্তু এই অল্প দূরত্ব অতিক্রম করতেই প্রায় তিনঘন্টা লেগে যায়। পাহাড়ের পর পাহাড় অতিক্রম করতে করতে ক্লান্ত মন পুনাখা জং-এ এসে চঞ্চল হয়ে উঠবে। সহদর নদী মো চু আর ফো চু। নদী দুটি যেখান এসে মিশেছে ঠিক সেইখানে দুই নদীকে ঘিরে পুনাখা জং। দূর থেকে নদীর সঙ্গমস্থল আর পুনাখা জং-এর প্যানারোমা দৃশ্য অসাধারণ। এই পুনাখা জং-কে বলা আনন্দপ্রম প্রাসাদ। এটি আসলে পুনাখার প্রশাসনিক ভবন। ৬০০ ফুট সুদীর্ঘ এই জংটি তৈরী হয় সেই ১৬৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯০৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভুটানের প্রথম রাজা উজেন ওয়াংচুক এই পুনাখা জং থেকেই তার রাজত্ব পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমানে ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ এই পুনাখা জং-টি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শীতকালীন বাসস্থান। ভুটানে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দানের সবচেয়ে বড় আশ্রম।প্রায় তিন তলা সমান পাথর আর কাঠের পাটাতনের সিড়ি বেয়ে আমরা পুনাখা জং এর মূল স্থাপনায় প্রবেশ করলাম। মূল ভবনটিও কাঠের। ভবনের দেয়াল জুড়েই বিশ্বাস আর ধর্মীয় অনুভুতির চিত্রকর্ম। পুনাখা জং-এ প্রবেশমাত্র দেয়ালের ডান দিকে চোখে পড়বে বিখ্যাত বৌদ্ধজ্যোতিষ চিত্র।

ভারত আর চীনা শিল্পের সংমিশ্রণ এই জ্যোতিষচিত্রটি মানুষের জীবন ছবি। মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেঁচে থাকার গুর রহস্যই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চিত্রটিতে। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই একটি খোলা করিডোর। করিডোরকে ঘিরে চারিদিকে দুইতলা সমান স্থাপনা, ছোট ছোট অসংখ্য ঘর আর ঘরের প্রতিটি স্থান জুড়েই শিল্পের পরম ছোঁয়া।জং-এর শেষপ্রান্তে রয়েছে একটি মন্দিরে ঘ্যানমগ্ন বুদ্ধর সুবিশাল মূর্তি। বুদ্ধর একপাশে দ্বিতীয় বৌদ্ধ শিষ্য গুরু আর অন্য পাশে ভুটানের প্রতিষ্ঠাতা ঝাবদরাং এর মূর্তি। দর্শনার্থিরা ভক্তিভরে বুদ্ধকে প্রণাম করছে। আর প্রণাম শেষে বুদ্ধর পায়ের কাছে পাত্রে রাখা তৈল নিয়ে মাথায় ছোয়ায়।

প্রণাম শেষেই বুদ্ধর আর্শিবাদ কপাল স্পর্শ করা। মন্দিরের মূল আকর্ষণ বুদ্ধের জীবনচিত্র। মন্দিরের দেয়াল জুড়ে চিত্রকর্মগুলো ১২টি পর্বে বুদ্ধের জীবন আর বৌদ্ধধর্মের বুৎপত্তির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। যারা ফটোগ্রাফি ভালো বাসেন, ফটোগ্রাফির প্রতি আলাদা ঝোঁক আমি নিশ্চিত পুনাখা জং-এ এসে তাদের মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে। এখানে ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তুর অভাব নেই।

রোদের আলো যখন পুনাখা জং-এর উপর পড়ে তখন জংটি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। সারা জং জুড়েই কেমন লালচে-কমলা আভা। লাল কাপড় আর ন্যাড়া মাথার যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও হতে পারে অন্যরকম আকর্ষণ। এরা মিতভাষী কিন্তু যথেষ্টই অতিথিপরায়ন। ভিক্ষুদের সাথে ছবি তোলার অনুরোধ করতেই তারা সানন্দে রাজি হয়ে যায়। পুনাখার জং-এর শৈল্পিকতা, স্বচ্ছ জলের বহতা পাহাড়ী নদী, নদীর উপরে কাঠের ঝুলন্ত সেতু।

সব মিলিয়ে পুনাখা জং মন্ত্রমুগ্ধ এক জগতের নাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com