1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

এই শীতে নীল জলের দেশে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫

সমুদ্র বরাবরের মতই সবার প্রিয়। উত্তাল গর্জন আর শীতল বাতাস সবার হৃদয়ই শিহরিত করে। নিজের ভেতরে অন্যরকম রোমাঞ্চ তৈরি হয়। পাহাড়, সমুদ্র আর নীল আকাশের অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায় সেখানে। সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন হুসাইন আরমান-

চতুর্থবারের মত সুযোগ করে দিলো ফেনী সরকারি কলেজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এবার নিজের ভেতরে উন্মাদনাটা অনেক বেশি কাজ করছিলো। কারণ প্রথমবারের মত সেন্টমার্টিন যাব। তিনদিনের সফরে সেন্টমার্টিন, ছেড়াদ্বীপ, কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ করা হয়। আগে কখনো সেন্টমার্টিন যাইনি। তাই এর সৌন্দর্য সম্পর্কে অতটা জানতাম না।

Martin-cover

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রাত বারোটায় কলেজ প্রাঙ্গন থেকে বাস ছাড়ে। বাসের মধ্যে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ৬টায় কক্সবাজার শহরে পৌঁছাই আমরা। কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে। একটু পর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে চেক করছে। এর জন্য সামান্য বিরক্ত লাগলেও রাস্তার দু’পাশের দৃশ্য বিরক্তিটা নিমিষেই দূর করে দিচ্ছে।

একপাশে নীল সমুদ্র আর অন্যপাশে সবুজের সমারোহ। সমুদ্র আর পাহাড়ের মাঝে বাস ছুটে চলছে। কখনো উঠে যাচ্ছি পাহাড়ের গায়ে আবার নেমে আসছি সমতলে। সূর্যের মৃদু আলো বাসের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যেন আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে। পথের দৃশ্য দেখতে দেখতে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে পৌঁছাই সকাল সাড়ে ৭টায়। বাস থেকে নেমে স্থানীয় একটি হোটেলে সকালের নাস্তা পর্বটা সেরে নেই।

Martin-cover

সাড়ে ৯টায় জাহাজ ছাড়বে। তাই ৩০ মিনিট আগেই আমরা জাহাজে উঠে যাই। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে প্রতিদিন যে কয়টি জাহাজ ছাড়ে, সবগুলো একই সময়ে ছাড়ে আবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ফিরে আসে। জাহাজে আমাদের আসন ছিলো একদম উপরের তলায়। সবচেয়ে মজার বিষয়- এই তলা পুরোটা খোলা ছিলো। অর্থাৎ জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে হবে না, সরাসরি দেখা যাবে। জাহাজের সামনে-পেছনে, ডান-বাম উভয় পাশ থেকে সবকিছু সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছিলো।

যথাসময়ে ভো-ভো আওয়াজ করে নাফ নদীতে জাহাজ চলতে শুরু করলো। নাফ নদীর বুককে দ্বিখণ্ডিত করে জাহাজ তার গন্তব্যের দিকে ছুটে চললো। এই নদী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তকে আলাদা করেছে। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা সীমান্ত আর কাঁটাতারের বেড়া জানান দিচ্ছিলো, আমরা মিয়ানমারের প্রতিনিধি। সবুজের মাঝে কিছুদূর পর পর ওয়াচ টাওয়ারগুলো স্বগর্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলো। নাফ নদীর দু’পাশের অবারিত মনকাড়া, অপরূপ সবুজের দৃশ্য দেখলে বোবা মানুষও হয়তো চিৎকার দেবে।

Martin-cover

সৌন্দর্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় জাহাজের পেছনে ছুটে চলা গাঙচিলগুলো। গাঙচিল জাহাজের দু’পাশে উড়তে থাকে। মনে হচ্ছে যেন, তারা পর্যটকদের অভিনন্দন জানাচ্ছে। গাঙচিলের ঝাঁক দেখে সবাই তখন সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তাদের ধরার চেষ্টা করে। পর্যটকরা তাদের চিপস ছুড়ে মারে। ওরাও জন্টি রোডসের মত মুখ দিয়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টা করে। কেউ ধরতে পারে কেউ পারে না। চিপস খাওয়ার জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে যায়। ছুড়ে মারা চিপস পানিতে পড়ে গেলে পানি থেকে সাথে সাথে তুলে নেয়।

নাফ নদী পেরিয়ে জাহাজ যখন সমুদ্রের মোহনায় প্রবেশ করে; তখন মনে হয় যেন আমরা কোন নীল রঙের খনিতে প্রবেশ করি। কাঁচের মত স্বচ্ছ নীল পানিতে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে- নারিকেল আর ঝাউ গাছের সারি বেষ্টিত নীলের মাঝে একখণ্ড সবুজ। আমাদের হুমায়ূন আহমেদের সেই ‘দারুচিনি দ্বীপ’।

Martin-cover

আড়াই ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজ এসে ভিড়ল সেন্টমার্টিনের জেটিতে। জাহাজ থেকে নেমে যেন নীলের দুনিয়ায় হারিয়ে গেছি। প্রথম দর্শনেই মনটা ভরে গেল। আকাশ ও সমুদ্রের পানি অনেক নীল দেখাচ্ছিল। চোখ সরাতে ইচ্ছে করছিল না। মনে মনে ভাবছিলাম, এখানে না এলে কী মিসই না হয়ে যেতো!

একপাশে ব্যাগ রেখে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আমিও কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। এবার সবাই মিলে হাঁটা দিলাম রিসোর্টের দিকে। একটু হাঁটতেই সামনের বাজারে ভ্যান পেয়ে চলে গেলাম রিসোর্টে। সেন্টমার্টিনের মাটিতে পা দিয়ে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে- যা বলে বোঝানো যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com