1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন

দেশের চারটি পর্যটন গন্তব্য

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের পর্যটন খাত দিন দিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করছে। কক্সবাজারের সমুদ্রতট থেকে গভীর সুন্দরবন, উত্তরবঙ্গের সমতল ভূমি থেকে পার্বত্য অঞ্চল, দেশের প্রতিটি জায়গায় পাওয়া যাবে অনন্য অভিজ্ঞতা। এর বাইরে বড় শহরগুলোকে কেন্দ্র করে আছে কিছু নাগরিক বিনোদনের জায়গা। দেশের চারটি পর্যটন গন্তব্য ও রিসোর্টের সুবিধা এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে জানার চেষ্টা করেছে।

ফ্যান্টাসি কিংডম

ফ্যান্টাসি কিংডম

ফ্যান্টাসি কিংডম বাংলাদেশের প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ থিম পার্ক। এখানে আছে থ্রিলিং সব রাইড, আছে বিশাল ওয়াটার কিংডম। আধুনিক বিনোদনজগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আছে এক্সট্রিম রেসিং গো-কার্ট গেমস। হেরিটেজ পার্কে আছে দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর রেপ্লিকা। লিয়া রেস্টুরেন্টের মতো মাল্টি-কুইজিন রেস্টুরেন্টও আছে এখানে। সঙ্গে রাত্রিযাপন আর বার-বি-কিউ পার্টির সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে রিসোর্ট আটলান্টিসে।

পার্কটিতে আছে ২০টির বেশি রাইড। আছে আর্কেড গেমস জোন। এতে যোগ হতে যাচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি রাইড হারিকেন ৩৬০ ভিআর। এর মাধ্যমে উপভোগ করা যাবে বিস্ময়কর সব দৃশ্য, ডাইনোসর, হাইস্পিড রেসিং প্রভৃতি।

ঠিক এর পাশেই তৈরি হয়েছে ওয়াটার থিম পার্ক ওয়াটার কিংডম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ওয়েভ রাইড, স্লাইডস, জায়ান্ট পুল এবং ডিজে পার্টির ব্যবস্থা। ফ্যান্টাসি কিংডমের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হেরিটেজ পার্ক। এখানে আছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আহসান মঞ্জিল, চুনাখোলা মসজিদ, সীতাকোট বিহারসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক রেপ্লিকা।

ফ্যান্টাসি কিংডম প্রথমবারের মতো দেশে নিয়ে এসেছে বিশ্বমানের গো-কার্ট রেসিংয়ের সুযোগ। এক্সট্রিম রেসিংয়ের আঁকাবাঁকা ট্র্যাকে গো-কার্টিং করার প্রতিটি মুহূর্তই শ্বাসরুদ্ধকর। এখানে ৪০০ মিটারের বেশি ট্র্যাকে চালানো হয় ফর্মুলা ওয়ান রেসিং কার।

কনকর্ড গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (পরিচালক) অনুপ কুমার সরকার জানিয়েছেন, ফ্যান্টাসি কিংডমে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এ বিষয়ে তাঁরা সড়ক অধিদপ্তরে কথা বলেছেন। মানুষ এখন নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এ কারণে দর্শনার্থী অনেক কমে গেছে।

অনুপ আরও জানিয়েছেন, তাঁদের এ পর্যটন ব্যবসা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এগুলো খুবই সম্ভাবনাময় জায়গা। ফ্যান্টাসি কিংডমে হাজার হাজার দর্শনার্থী থাকে। তবে রাস্তা ও নিরাপত্তার কারণে তাতে খানিক ভাটা পড়েছে।

সম্ভাবনা বিষয়ে তিনি বলেন, রাস্তা, ফ্লাইওভার ঠিক করা, নিরাপত্তা জোরদার করা এবং এ অঞ্চলে গার্মেন্টসকেন্দ্রিক অস্থিরতা না থাকলে আরও ভালো হয়। তিনি সরকারের কাছে ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগে যেটা ছিল ৫ শতাংশ, সেটা এখন ১৫ শতাংশ। আবার অনেকেই নতুন নতুন সুবিধা আনতে চাইছে। কিন্তু আমদানি খরচ অনেক বেশি। এটা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার শিল্প।

সে ক্ষেত্রে ভ্যাট, ইমপোর্ট ডিউটি যদি কম হতো, তবে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আকৃষ্ট হতো। ২০২২ সালে বিনোদনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করলেও আমরা এখনো শিল্পের সুবিধা পাচ্ছি না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো নিশ্চিত করলে আরও ভালো হবে।’

ওয়ান্ডারল্যান্ড

ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

এটি রাজধানীর বাড্ডা সাতারকুলে অবস্থিত অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে পরিবার ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরণের রাইড রয়েছে। এখানে আছে ফেরিস হুইল, রোলার কোস্টার, বাম্পার কারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড। পার্কের ভেতর পানিতে খেলার জন্য আছে স্লাইড ও সুইমিংপুল।

পার্কের ভেতরে খাবার স্টল ও ক্যাফে রয়েছে। এখানে সুস্বাদু খাবার ও পানীয় পাওয়া যায়। পার্কটিতে মাঝে মাঝে কনসার্ট, পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং করপোরেট ইভেন্ট আয়োজনের ব্যবস্থা আছে।

এখানে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের দাম সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। শিশুদের টিকিটের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।ওয়ান্ডারল্যান্ডের সাতারকুল শাখার ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম খান জানান, পর্যটনকে এখন শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ওয়ান্ডারল্যান্ড ছিল। এর মধ্যে তিনটি বিগত সরকারের সময় ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও চারটি জায়গায় ওয়ান্ডারল্যান্ড রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের ভালো সেবা দিতে। শিশুরা যাতে একটু ভালো বিনোদন পায় সেই ব্যবস্থা ওয়ান্ডারল্যান্ডগুলোতে করা হয়েছে।’

মানা বে ওয়াটার পার্ক 

মানা বে ওয়াটার পার্ক 

মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় অবস্থিত মানা বে ওয়াটার পার্ক। এটি দেশের প্রথম প্রিমিয়াম ওয়াটার পার্ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশেই ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে মেঘনা ব্রিজের পরে এর অবস্থান। ঢাকা থেকে মানা বে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে বাসে বা নিজস্ব গাড়িতে যাওয়া যায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেও বাসে এখানে আসা যায়। পার্কটিতে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা আছে।

প্রায় ৬০ হাজার স্কয়ার মিটার বিস্তৃত এই ওয়াটার পার্ক দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম। পার্কটিতে সব বয়সের মানুষের জন্য বৈচিত্র্যময় আয়োজন রয়েছে। এখানে ১৭টি রাইড আছে। তার মধ্যে অন্যতম ওয়াটার স্লাইড ট্যুর, ওয়েভ পুল ও ফ্লোরাইডার ডাবল। শিশুদের জন্য একটি আলাদা জোন এবং একটি কৃত্রিম নদীর ব্যবস্থা রয়েছে পার্কটিতে।

মানা বে ওয়াটার পার্কের সিনিয়র ম্যানেজার আরিফা আফরোজ বলেন, ‘দেশে মানুষ সব সময় ঘুরতে পছন্দ করেন। হোটেলগুলোতে মানুষ অনেক আসেন। ওয়াটার পার্কের ব্যাপারটি বাংলাদেশে একদম নতুন। মাত্র এক বছর হয়েছে। এখনই ভালো বা খারাপ বলা যাবে না। মাত্রই বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের জন্য কিন্তু ট্যুরিজম শিল্প একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত বাংলাদেশে কোনো কিছু হলেই এই শিল্পের ওপর আগে আঘাত আসে। খুব বেশি ভালো অবস্থানে নেই ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি।’

ওয়াটার পার্ক বিদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত না আগের মতো স্থিতিশীল হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আরিফা আফরোজ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বের হওয়া ও আসার বিষয়টি আরও সহজ করা দরকার। যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা নিয়ে আর একটু নিশ্চিত হতে হবে। এসব বিষয়ে কাজ করলে মানুষের আরও আগ্রহ বাড়ত। দেশের বাইরে মানুষ যায়, কারণ, নিরাপত্তা ভালো থাকে।’

মাটিটা রিসোর্ট 

মাটি-টা রিসোর্ট 

মাটিটা রিসোর্ট চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে অবস্থিত। এটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। রিসোর্টটির চারপাশে আছে সবুজ বন এবং পাহাড়। এখানে কটেজ, সুইমিংপুল, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন আউটডোর কার্যকলাপের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে থাকার জন্য আছে স্যুট, গ্ল্যাম্পিং তাঁবু এবং ভিলা। এগুলো একক ব্যক্তি, দম্পতি, পরিবার এবং করপোরেট রিট্রিটের জন্য উপযুক্ত।

প্রকৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে মাটিটা সবুজ নীতিতে বিশ্বাসী। এই রিসোর্টের সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে ক্যাম্প সাইট সেটআপ, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো পরিবেশ, ফ্লাইং ফক্স, ক্যাপচার দ্য ফ্ল্যাগস, টিক ট্যাক টো, বিগ ফুট, হাইকিং, নৌবিহার, হিল ট্রেকিং, জিপ লাইনিং, রিভার পাস (ভার্সন ১), সিনক্রো ফুটিং, সাইক্লিং, ক্যাট অ্যান্ড মাউস রেস, ট্রেজার হান্ট (ভার্সন ১), প্যাডেল বোটিং, বেল্ট রেস, বেলুন রেস (কিউ), বেলুন বার্স্ট (ভার্সন ১ ও ২), টেনিস বল/বেলুন রেস, টিক ট্যাক টো (ভার্সন ১), টিক ট্যাক টো (টেবিল ও পানিতে), তিরন্দাজি (পেইড), কায়াকিং, নৌবিহার, র‍্যাফট মেকিং ইত্যাদি।

রিসোর্টটির মালিক ড. মুনাল মাহাবুব বলেছেন, ‘পর্যটন খাতে দেশের সম্ভাবনা অপার। কক্সবাজার তো আছেই। এর বাইরে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চলগুলো, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, সিলেট, সুনামগঞ্জ এমন অনেক জায়গা আছে। তবে এখানে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি।

একটা পর্যটন কেন্দ্র চালানোর জন্য যে পরিমাণ দক্ষ মানুষ আমাদের দরকার, তা নেই।’ তিনি জানান, পর্যটনশিল্পকে ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার থেকে যেসব সুবিধা দরকার, তা খুবই কম। যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দরকার হয়, একটা পর্যটনকে বিকশিত করার সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের মানুষ এখন ঘুরতে চায়। কিন্তু সে মান দেশে নেই।

মুনাল মাহাবুব বলেন, ‘দেশে সবকিছুর জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। যদি রাঙামাটি বা খাগড়াছড়ির কথা বলা হয়, সেখানে কিছু করার জন্য ঢাকা থেকে মানুষ আনতে হয়। সেখানে খরচ অনেক বেশি। এই সেক্টরে কাজ করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ।’

মাটিটা নিয়ে মুনাল মাহাবুব জানান, এটি স্কুল ক্যাম্পিং দিয়ে শুরু। ঢাকার বিখ্যাত স্কুলগুলো এখানে ক্যাম্প করতে আসত। সেখান থেকে রিসোর্টে করার চিন্তা করা হয়। কিন্তু রিসোর্ট করতে গিয়ে দেখা যায়, যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, সে পরিমাণে সাড়া নেই। দেশে পর্যটনের ব্যবসা হয় সিজনকেন্দ্রিক। তবে দেশে এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com