হিংসা, রাজনীতির খবর থাকলেও এখনও নবদম্পতিরা হানিমুনের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরকে বেছে নেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে রাজনীতির সব রংই ফিকে। আর এখন তো ভূস্বর্গে বসন্ত। উপত্যকা জুড়ে এখন ঝলমলে রোদ। মনোরম আবহাওয়া। ডাল লেকে শিকারা চড়তে চড়তে উপভোগ করা যাবে উপত্যকার সৌন্দর্য। গুলমার্গ ও সোনমার্গ এখনও বরফ রয়েছে। তবে, সেই বরফের স্তর পুরনো। ডাল লেক থেকে শুরু করে কাশ্মীরের ভিন্ন জায়গায় ভিড় পর্যটকদের। আর সবচেয়ে বেশি ভিড় কাশ্মীরের টিউলিপ গার্ডেনে।
কাশ্মীরের টিউলিপ গার্ডেন বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অমিতাভ বচ্চন এবং রেখার ‘সিলসিলা’ ছবির দৃশ্য। মাঠের পর মাঠ ফুটে রয়েছে লাল, হলুদ, সাদা টিউলিপ। কাশ্মীরের টিউলিপ গার্ডেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ ফুলের বাগান। যদিও এর নাম ‘ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন’। যদিও কাশ্মীরিদের কাছে আজও এটি সিরাজ বাগ নামেই পরিচিত।
শীত কাটিয়ে বসন্ত ভরে উঠেছে গোটা বাগান। পর্যটকদের জন্য ১৯ মার্চ থেকে খুলে গিয়েছে বাগান। জম্মু এবং কাশ্মীরের পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে টিউলিপ গার্ডেনে শুরু হয়েছে ‘টিউলিপ উৎসব’। এই মরশুমে টিউলিপের বাগানে প্রায় একসঙ্গে ১৫ লক্ষ টিউলিপের সমাহার দেখা যাবে। তাই সেখানে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেশ ভালই। আর পর্যটকদের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই বাঙালি।
শ্রীনগরের জাবারওয়ান পর্বতমালার পাদদেশে এবং ডাল লেকের তীরে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান। এখানে শুধু যে ১৫ লক্ষ টিউলিপ একসঙ্গে দেখা যাবে, তা নয়। টিউলিপের প্রায় ৬৮টি প্রজাতি এই বাগানে রয়েছে। টিউলিপ ছাড়াও এখানে হায়াসিন্থ, ড্যাফোডিল, রানানকুলাস, মুসকারি এবং সাইক্ল্যামেনে মতো ৪৬ প্রকারের ফুল রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফুলই হল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে। টিউলিপ গার্ডেন ছাড়াও মুঘল গার্ডেনের চশমে শাহী, শালিমার ও নিষাদ বাগেও ফুটে রয়েছে বিভিন্ন রং-বেরঙের ফুল।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণের প্রতি বছর ‘টিউলিপ উৎসব’-এর আয়োজন করা হয়। শ্রীনগরের এই টিউলিপ বাগানের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ইনাম-উল-রেহমান সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “টিউলিপ ফুলগুলো মাত্র তিন থেকে পাঁচ দিন হয়তো ফুটে থাকে। কিন্তু এর কুঁড়িগুলোকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।”
বসন্তের আবহে উপত্যকায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বাঙালি পর্যটক তো রয়েছে, তার সঙ্গে গুজরাতি, মারাঠি ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকেরা এই সময় ভিড়ে কাশ্মীরে ভিড় করেন। এছাড়া বিদেশী পর্যটক রয়েছে। এখন আতিথেয়তায় ব্যস্ত ভূস্বর্গ। তার সঙ্গে বসন্তের ছোঁয়ায় একটু একটু করে সেজে উঠছে উপত্যকা। পহেলগাঁও থেকে শুরু করে অনন্ত নাগ, গুলমার্গ, সোনমার্গ সব জায়গায় এখন ভিড় এই পর্যটকদের।
পর্যটকদের এই ভিড় লেগে থাকবে এপ্রিলেও। কারণ এপ্রিলই এই টিউলিপ গার্ডেন ঘুরে দেখার সেরা সময়। শ্রীনগরের লাল চক থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই বাগান। পর্যটকদের জন্য সপ্তাহে ৭ দিনই সকাল ৭টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মাত্র ৫০ টাকা টিকিট কেটেই আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন পুরো বাগান। তাহলে এপ্রিলে কাশ্মীর যাবেন নাকি?