গ্রিসের সর্ববহৎ দ্বীপ হিসেবে পরিচিত নেক্সস। গ্রিসের উত্তর পশ্চিম উপকূলে নেক্সস শহর অবস্থিত। এটি একসময় প্রত্নতাত্ত্বিক সাইক্ল্যাডিক সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। গ্রিসের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই শহরটি। গ্রিসে প্রতি বছর পুরো বিশ্ব থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে যান এবং তাদের অন্যতম আকর্ষনের জায়গা হিসেবে ভ্রমণ তালিকার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে নেক্সস।
গ্রিসের অনেক প্রাচীন ইতিহাস এবং গল্প শোনা যায়। একারণে দেশটি সম্পর্কে আগ্রহও কাজ করে আলাদা রকম। ভিন্ন এক দেশে ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া পেতে গ্রিসের নেক্সসের ভ্রমণ স্থান হিসেবে জুড়ি মেলা ভার।
দ্বীপটি এমেবির উৎস হিসেবে বিখ্যাত, এটি কর্ডুম সমৃদ্ধ একটি মূল্যবান শিলা। নেক্সসের আয়তন প্রায় ৪৩০ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ১,০০৩ ফুট এবং সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট জিউস নামে পরিচিত। এখানে প্রায় ১৯,০০০ জনগণের বসবাস। এটি গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ থেকে শুরু করে এই অবধি নেক্সাসের সাথে জড়িয়ে আছে ছোট-বড় অনেক গল্প এবং ইতিহাস। সাইক্ল্যাডিক সভ্যতারও প্রমাণ মেলে সেখানে। গুহার মধ্যে সেসময়কার স্বর্ণ এবং পাওয়া অন্যান্য বস্তুর উপস্থিতি। যা সেই যুগের বাসিন্দাদের অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।
একসময় নেক্সস বানিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। ৫০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে হেরোডোটাস নেক্সাসকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রীক দ্বীপ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে পারস্য যুদ্ধেও সংগঠিত হয় এখানে।
এই অঞ্চলে কৃষি পণ্য ভালো জন্মায়। উর্বর মাটি এবং পানির সহজলভ্যতার কারণে সেখানকার অনেক মানুষ কৃষিকেই তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এছাড়া অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটন নির্ভর। পাশাপাশি বানিজ্যের মাধ্যমেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
নেক্সস ভূ-মধ্যসাগরীয় খাবারের খাঁটি স্বাদের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। এই অঞ্চলের সুগন্ধযুক্ত গুল্ম, শাকসবজি, মাছ, মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবারগুলো অবশ্যই মনোমুগ্ধকর।
এই অঞ্চলের আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে উষ্ণ এবং শীতকালে হালকা শীত। নেক্সসে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে পর্যটন মৌসুমেই নেক্সস ভ্রমণে যাওয়াই শ্রেয়। নেক্সসে পর্যটকের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থানগুলো তুলে ধরছি :
পোর্টারা :
পুরো দ্বীপের মধ্যে অন্যতম আকর্ষনীয় জায়গা। এখানে একটি মার্বেল ফ্রেমের স্মৃতিসৌধ তৈরী করা রয়েছে।
ওল্ড টাউন :
অন্যতম প্রাচীন শহর। এখানে মার্বেল পাথরের তৈরী ঘর, স্থাপনা দেখা যায়।
কাস্ট্রো :
কাস্ট্রো হল ছোট ছোট ফুলের চত্বর যেখানে মঠ, গির্জা এবং মহামানব রয়েছে।এর দক্ষিণ অংশে একটি ক্যাফে রয়েছে।
অ্যাজিওস প্রোকোপিয়োস বিচ :
চোরা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে এই সমুদ্র সৈকতটি অবস্থিত। এর দক্ষিণে সামুদ্রিক রেস্তোঁরা এবং ক্যাফে, সান লাউঞ্জার এবং সানশেডের বৃহৎ ব্লক রয়েছে।
প্লাকা বিচ :
নেক্সাসে অবস্থিত অন্যতম জনপ্রিয় একটি সৈকত। সমুদ্রের অন্যরকম এক অনুভূতির সাক্ষী হতে অনেকেই ভিড় জমায় এখানে।
জাস মাউন্ট :
এটি নেক্সসের সর্বোচ্চ শীর্ষ। অনেকে এই মাউন্টে আরোহন করে থাকে। এ যেন এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
ভিনিশিয়ান জাদুঘর :
এখানে নেক্সসের অনেক দুর্লভ সামগ্রির দেখা মেলে।
থাকা এবং খাওয়া :
নেক্সসে থাকার জন্য সর্বত্রই হোটেলের খোঁজ পাওয়া যায়। নেক্সস পর্যটন অঞ্চল হওয়ায় এখানে সারাবছর পর্যটকের ভিড় থাকে এবং হোটেল গুলোও খোলা থাকে। উল্লেখযোগ্য হিসেবে- দ্য সেন্ট ভ্লাসিস হোটেল, পেনশন সোফি, ইলাইলিথোস লাক্সারি রিট্রিট, নিসাকি, কাভোস বুটিক হোটেল ইত্যাদি হোটেলের নাম বলা যেতে পারে।
নেক্সস টাউনের সেরা রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে রয়েছে নস্টিমন হেলাস, টু এলিনিকো ডুকাটো, বারোজি রেস্তোঁরা ও ককটেল বার, সৌভলাকী টু মাকী ইত্যাদি।
সুমাইয়া জান্নাত