হিমাচল প্রদেশ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ- তুষারাবৃত পর্বতসংকূল অঞ্চল। হিমাচল ভ্রমণের আকাঙ্খা সবার মনেই আছে। সেখানকার নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করেন।
বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশের শিমলা, মানালি, ধর্মশালা, ডালহৌসি, চাম্বা, খাজ্জিয়ার, কুল্লু ও কাসাউলির মতো পার্বত্য এলাকাগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে সেখানে এমন কিছু অফবিট প্লেস আছে, যা সেখানকার লুকানো রত্ন হিসেবে বিবেচিত।
তেমনই এক স্থান হলো হিমাচল প্রদেশের তীর্থন উপত্যকার কেন্দ্রস্থল গুশাইনি। এটি এতোটাই মনোরম স্থান যেখানে একবার গেলে হয়তো আপনার আর ফিরে আসতে ইচ্ছে করবে না। গুশাইনির আদিম সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশ ভ্রমণকারীদের বিমোহিত করে।
প্রকৃতির স্বর্গ হিসেবেও বিবেচিত গুশাইনি। ওক ও পাইনের ঘন বন, চারদিকে শুভ্র পাহাড় ও উপত্যকার মধ্য দিয়ে মৃদুভাবে প্রবাহিত তীর্থন নদীর সুরেলা গুঞ্জন সব মিলিয়ে গুশাইনির প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে গুশাইনি এলাকাটি। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে স্থানটি। প্রকৃতিপ্রেমীরা সেখানে গিয়ে ট্রেকিং করতে পারেন।
গুশাইনি হলো ট্রেকারদের জন্য একটি স্বর্গীয় স্থান। রোলার ট্র্যাক, সুউচ্চ চূড়া দ্বারা বেষ্টিত একটি নির্মল তৃণভূমি, দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়।
আরেকটি ট্রেইল হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কের দিকে নিয়ে যায়। যেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন হিমালয়ের বাদামি ভাল্লুক, তুষার চিতা ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী।
গুশাইনি তীর্থন নদীতে পাওয়া যায় ট্রাউট মাছ। যা বেশ সুস্বাদু। মাছ ধরতে উত্সাহীরা চাইলে এই নদী থেকে সহজেই মাছ ধরতে পারবেন।
গুশাইনির পাশেই আছে সেরোলসার হ্রদ। সেখানকার ট্রেকিং রুট ঘন বনের মধ্য দিয়ে যায়। এছাড়া শোজা ও বানজারের মতো মনোমুগ্ধকর গ্রামগুলোও ঐতিহ্যবাহী হিমাচলি সংস্কৃতি ও স্থাপত্য প্রদর্শন করে।
পরিযায়ী মৌসুমে গুশাইনিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা ভিড় করে। যা সেখানকার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেখানকার হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক হিমালয়ের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
গুশাইনির খাবার ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিমাচলের সংস্কৃতির আভাস দেয়। পর্যটকরা সেখানে খাঁটি হিমাচল খাবার যেমন- সিড্ডু (এক ধরনের স্টাফড রুটি), ধাম (একটি ঐতিহ্যবাহী ভোজ) ও নদী থেকে প্রাপ্ত তাজা ট্রাউট মাছের স্বাদ নিতে পারেন।
গুশাইনিতে নানা ধরনের গেস্ট হাউস ও হোম স্টে আছে। সেখানে এমন অনেক বাসস্থান আছে, যেখান থেকে আপনি পাহাড় ও নদীর অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখতে পারবেন।
দিল্লি ও চণ্ডীগড়ের মতো বড় শহর থেকে রাস্তাযোগেই গুশাইনি পৌঁছাতে পারবেন। এর নিকটতম প্রধান শহর হলো অট। যেখান থেকে গুশাইনির দূরত্ব বেশ কম। অট থেকে গুশাইনি পৌঁছানোর জন্য বাস ও ট্যাক্সি সহজেই পাবেন।