কুয়ালালামপুরের পরিচয়
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হল এমন এক শহর যেখানে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ ঘুরতে যেতে পছন্দ করে। এখানে পুরাতন ঐতিহ্যের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোঁয়াও খুঁজে পাওয়া যায়। আর শহরটাকে দেখলে মনে হয় সবসময়ই উৎসবের আমেজে থাকা রঙ্গিন এক শহর কুয়ালালামপুর। সংক্ষেপে এই শহরকে কে এল (kl) বলা হয়।
কুয়ালালামপুরের দর্শনীয় স্থান
কুয়ালালামপুরের পুরো শহর জুড়ে অসংখ্যা ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, সুদৃশ্য পার্ক, মিনার, মুঘল ধাঁচের গম্বুজ ও স্কাই স্ক্যাপার। এছাড়াও রাস্তার ধারে দেখা মিলবে সারি সারি রঙ্গিন খাবারের দোকান। পর্যটকদের জন্য দেখার মতো আছে অনেক কিছু। সময় আর সুযোগ থাকলে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন শহরের বিভিন্ন জায়গা।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার : কুয়ালালামপুরের প্রধান আকর্ষণ এই টাওয়ার। ৪৫ মিনিটে টুরিস্ট গাইডের মাধ্যমে এখানে ঘুরে দেখা যায়। তবে টিকিটের সংখ্যা সীমিত থাকার কারনে আগে থেকেই অনলাইনে বা টাওয়ারের অফিসে গিয়ে টিকেট কাটতে হয়। এখানে ঘুরে দেখার জন্য স্কাই ব্রিজ, অবজারভেশন ডেক ও একটি গিফট শপ আছে। বিস্তারিত পড়ুন এইখানে, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ভ্রমণ গাইড।
ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম : পুরো বিশ্বের ইসলামিক বিভিন্ন শিল্প যেমন বিশ্বের সেরা ইসলামিক ভবন, চমৎকার স্থাপত্যের নমুনা মডেল,মুসলিমদের ব্যবহৃত কার্পেট, গহনা ও ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শিত আছে এখানে যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। এই বিল্ডিং এর গম্বুজের সূক্ষ্ম কারুকার্যের কাজ দর্শকদের নজরে পরার মতো।
চায়না টাউন : পুরাতন কুয়ালালামপুর শহর খুঁজে পাওয়ার জন্য যেতে পারেন এই জায়গায়। পুরনো শহরের জন্ম এখানে হলেও সময়ের সাথে সাথে চায়না টাউন এখন বেশ উন্নত হয়েছে। চায়না টাউনে দেখার মতো বেশ কিছু জায়গা আছে। যেমন- মিনারা টাওয়ার, মারদেকা স্কোয়ার, জংসান বিল্ডিং, সেন্ট্রাল মার্কেট ও পেতালিং স্ট্রীট মার্কেট।
লেক গার্ডেনস : ১৭৩ হেক্টরের বিশাল এই জায়গা কুয়ালালামপুরের সবচেয়ে বড় সবুজ জায়গা। এখানে ইচ্ছে হলে পুরো একটি দিন আপনি কাটাতে পারেন, এমনই সুন্দর সবুজের সমাহার চারদিকে। এখানকার লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রকৃতিপ্রেমীদের নিঃসন্দেহে ভালো লাগার মতো। পারডোনা বোটানিক্যাল গার্ডেন ও লেক ছাড়াও এখানকার কে এল বার্ড পার্ক পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম : এই চমৎকার আধুনিক জাদুঘর মালয়েশিয়ার অতীত থেকে বর্তমানের ইতিহাস ধারন করে। এখানে বিভিন্ন গ্যালারি আছে তার মধ্যে একটিতে দেশের ভূতাত্ত্বিক বিভিন্নবৈশিষ্ট্য ও প্রাগৈতিহাসিক সময়ের ইতিহাসতুলে ধরা হয়েছে।
মানেরা কুয়ালা লামপুর : বুকেট নানাসের তীর থেকে গড়ে উঠা ৪২১ মিটার লম্বা এই টাওয়ার থেকে কুয়ালালাপুর শহরের সুন্দর দৃশ্য চোখে পরার মতো। টাওয়ারের শীর্ষে একটি ঘূর্ণায়মান রেস্তোরা আছে, ২৭৬ মিটার উঁচুতে আছে একটি অভ্যন্তরীণ অবজারভেশন ডেক আর ৩০০ মিটার উপরের স্কাই ডেক পর্যটকদের বেশ পছন্দের ও রোমাঞ্চকর একটি জায়গা।
মার্দেকা স্কোয়ার : মার্দেকা স্কোয়ার হলবর্গাকৃতি খোলামেলা বিশাল এক জায়গা যেখানে ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়াহয়েছিল, বর্তমানে এই বর্গাকৃতি জায়গাটি ৯৫ মিটার ফ্ল্যাগ পোল দিয়ে ঘেরা।
কে এল বার্ড পার্ক : প্রায় ৩০০০ এর ও বেশী পাখি আছে এই ২১ হেক্টর বিস্তৃত পাখিশালায়। ফ্লামিংগো থেকে টিয়া পাখি, এইরকম প্রায় ২০০ প্রজাতির এশিয়ান পাখি কে এখানে রাখা আছে। পার্কটি চারটি ভাগে বিভক্ত, প্রথম দুই ভাগে পাখিরা ছায়ার নিচ দিয়ে অবাধে চলাচল করে, আর তৃতীয় ভাগের পাখিরা হলো হর্নবিল ( তাদের বিশাল বড় ঠোঁট থাকে) আর চতুর্থ ভাগে খাঁচায় সংরক্ষন করা পাখি থাকে।
কে এল ফরেস্ট ইকো পার্ক : ৯.৩৭ হেক্টর বিশিষ্ট এই পার্ক শহরের মধ্যে সবচেয়ে সংরক্ষিত জঙ্গল যা কুয়ায়ালালামপুর শহরের মাঝে অবস্থিত। বুকিত নানাস বা আনারসের পাহাড় হিসেবে এই পার্ক পরিচিত।নানা ধরনের পোকা মাকড় ও পাখির দেখা মিলবে এখানে।এখানের উঁচু ক্যানোপির পাশ দিয়ে হাঁটার রাস্তাটা বেশ সুন্দর।
এ ছাড়া আরও বেশ কিছু জায়গা আছে কুয়ালালামপুর শহরে। যেমনঃ ডিয়ার পার্ক, অর্কিড গার্ডেন, বাটারফ্লাই পার্ক ও সিন সযে সি ইয়া টেম্পল। আর সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন কুয়ালালামপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম কাম্পুং ভারু থেকে।