ইতালির ঐতিহাসিক নগরী ভেনিস। পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, তার গা ঘেঁষে একে-বেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ লেকের জন্য এর খ্যাতি ভুবনজোড়া। ভেনিসের মতো নান্দনিক শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পুরো শহরের বুক জুড়ে থাকা পানিতে প্রাসাদের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে সঙ্গে আকাশের মেঘেরাও লেকের জলে লুটোপুটি খায়। অপূর্ব সুন্দর এই শহরটি তাই সারা পৃথিবীর পর্যটকদের প্রিয় একটি শহর। ভেনিস সারা বছরই পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ পর্যটক ভেনিস এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে যান।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ভাসমান রোমান্টিক নগরী ভেনিস সম্পর্কে-
শহরটির শিল্প সাহিত্য, বিশেষ করে স্থাপত্যশিল্পে যে কারও মন জুড়িয়ে যায়। প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি নান্দনিক স্থাপত্য, রঙ-বেরঙের কারুকার্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জলের মধ্যে। ভেনিস নগরটি মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ইতিহাস থেকে জানা যায়- জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে শহরটি।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ভেনিসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সঙ্গী একমাত্র ছোট ডিঙি নৌকা। ভেনিসে বসবাস করা প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা হলো এই নৌকা। বাড়ির ঘাটেই বাঁধা থাকে নিজস্ব নৌকা অথবা স্পিড বোট। ভেনিসের জলযানের একটি আকর্ষণীয় রোমান্টিক জলযান হলো “গণ্ডোলা”। সুন্দর এই যানটি যে কারও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। চমৎকার কারুকার্যে খচিত, শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় ফুটে উঠা গণ্ডোলায় চড়ে নদীর জ্বলে ভাসতে ভাসতে দেখে নিতে পারবেন ভেনিসের পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণগুলো। অথবা খালের পাশ ঘেঁষে যাওয়া রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে। মজার বিষয় হচ্ছে, আপনি যতই হাঁটুন চারপাশ পানিবেষ্টিত হওয়ায় ভেনিসের প্রধান দ্বীপের বাইরে চলে যাওয়ার ভয় নেই। তাছাড়া একটু পরপরই দেখার মতো কিছু না কিছু না চোখে পড়বে, হতে পারে কোনো প্রাচীন চার্চ, কোনো মিউজিয়াম বা কোনো প্রদর্শনী। আর একটু পরপর মুখোশ, হ্যাট বা নানা রঙের কাচের জিনিসের দোকান তো আছেই।
ভেনিসের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মোহনীয় সৌন্দর্য। রোমান্টিক শহরটি নবদম্পতিদের হানিমুনের জন্য দারুণ জনপ্রিয় একটি জায়গা। তাই এই শহরকে “সিটি অব লাভ” বলেও ডাকা হয়।
ভেনিস নগরীর সান মার্কোতে রয়েছে আকর্ষণীয় ভৌজ প্যালেস। প্রাচীন স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত এই ভবনটি এখন মূলত একটি জাদুঘর। এছাড়াও এখানে ছোট ছোট আরও অনেক পুরনো মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য প্রাসাদ, জাদুঘর রয়েছে। তার পাশাপাশি অনেক রকমের বুটিক, ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টেও ঘুরতে পারবেন।
মাকড়শার জালের মত পুরো ভেনিস জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য খাল। এরই মাঝে এই শহরকে দ্বিখণ্ডিত করেছে গ্র্যান্ড ক্যানেল। নৌকা অথবা স্পিডবোটে এসব খালে ঘুরে বেড়ালে চোখে পড়বে শহরের চোখ জুড়ানো রঙ, নকশা ও দারুণ স্থাপত্যশৈলীর। খালের দুই পাশকে সংযুক্ত করেছে চমৎকার সব সেতু। সবচেয়ে সুন্দর ও জমকালো সেতু হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে রিয়ালটো ব্রিজ, যা গ্র্যান্ড ক্যানেলের উপর স্থাপিত। খালের মধ্যে থেকে এই সেতুর অপূর্ব কারুকার্য দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়। ভেনিস আসলে গণ্ডোলায় চড়ে এই সেতুর নিচ দিয়ে পার না হলে পুরো ভ্রমণই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
মুখোশের শহর হিসেবে সারা বিশ্বে দারুণ খ্যাতি আছে ভেনিস নগরীর। প্রতিবছর ভেনিসে মুখোশের কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়। এই কার্নিভাল উপলক্ষে অসাধারণ কারুকার্য খচিত, শৈল্পিক রুচির সমন্বয়ে তৈরি হয় চমৎকার সব মুখোশ। ভেনিস গেলে পর্যটকরা রঙ বেরঙের এই মুখোশগুলো কিনে থাকেন।
এছাড়া, ভেনিসের সেন্ট মার্কোয় অবস্থিত বিখ্যাত স্থাপত্য ক্যাথেড্রাল। ক্যাথেড্রালের চার দিকের দেয়াল নানান সুসজ্জিত কারুকার্যে খচিত চিত্রকর্ম, অক্ষরে লিপিবদ্ধ নানান কাহিনী পর্যটকদের বিমোহিত করে। ভেনিসের লিডো দ্বীপ পর্যটকদের জন্য আরেকটি চমৎকার স্থান। এটিকে বলা হয় ভেনিসের সোনালি দ্বীপ। এ দ্বীপের সমুদ্র সৈকতে গোধূলি লগ্নের সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে প্রচুর পর্যটকদের সমাগম ঘটে এখানে।
ভাসমান শহর ভেনিস সামুদ্রিক খাবারের জন্য পর্যটকদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যারা সামুদ্রিক খাবারপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্যের নাম ভেনিস। দ্বীপটিতে ভূ-মধ্যসাগরের নানান সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে সুদূর উত্তর আটলান্টিক থেকে ধরে আনা অক্টোপাস, স্কুইডও। পৃথিবী বিখ্যাত অপেরা হচ্ছে ইতালির অপেরা। ট্র্যাট্টো লা ফেনিস প্রাসাদ টি দ্যা ফিনিক্স নামে এই অপেরা হাউজে পর্যটকরা আসেন ইতালির বিখ্যাত অপেরা উপভোগের জন্য। এসব কারণেই ভেনিসকে ডাকা হয় রোমান্টিক শহর নামে।