যাত্রা, সিনেমা বা নাটক প্রদর্শন নয়। বগুড়ায় বিশ টাকার টিকেটে দর্শনার্থীরা উপভোগ করছে দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখীর বাগান। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সব বয়সের নারী-পুরুষ পরিদর্শন করছেন এই বাগান। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে উঠেছে ওই এলাকা। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলেও সেটি এখন বিনোদন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামে।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন সৌরভ মাহমুদ মিশু নামের এক যুবক। দিগন্ত জোড়া ফসলের সবুজ মাঠের ভেতরে বেড়ে ওঠা সূর্যমুখী ফুলের বাগানে হলুদ ফুলে মন কাড়ছে পথচারীদের। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন তার বাগানে। এক নজর বাগান ঘুরে দেখতে বিশ টাকায় টিকিট কাটছেন তারা।
পড়াশোনা শেষে চাকরি না পেয়ে বাড়িতে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন সৌরভ। তার বাগানে এখন লাখো ফুলের ঝলকানি। যা দীগন্ত জোড়া সবুজ মাঠের ভেতরে একটি আলাদা সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যমুখী তেল উৎপাদন থেকে আয়ের পাশাপাশি তিনি বাগানে ভ্রমণের জন্য দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা মূল্যের টিকেট চালু করেছেন। যেখান থেকে তিনি বাড়তি আয় করছেন। প্রতিদিন সৌরভের সূর্যমুখীর বাগানে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। ঈদুল ফিতরে দর্শনার্থীদের সমাগম বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তিনি।
চাষি সৌরভ মাহমুদ মিশু বলেন, ‘ইউটিউব দেখে সূর্যমুখীর বাগান করেছি। ২০ বিঘা জমিতে এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দর্শনার্থীদের থেকে টিকিট বিক্রির মাধ্যমেও আয় হচ্ছে। এছাড়া ২০ বিঘা জমিতে প্রায় ১২০ মণের মতো সূর্যমুখী পাওয়া যাবে। বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবো।’
সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং ছবি তুলতে বাগানে এসেছি। খুবই ভাল লাগছে। আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। ২০টাকায় টিকিট কেটে পুরো বাগান ঘুরে দেখেছি। হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে বাগান।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছিল। চলতি বছরে ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করে ৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ৪৮ মণ সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছিল। বাজারে প্রতিমণ সূর্যমুখী ৬ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সাধারণত ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ জানান, সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মুক্ত। এ তেল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মানুষ রক্ষা পাবে। তাই সূর্যমুখীর তেল সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।