1. admin@cholojaai.com : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. b_f_haque70@yahoo.com : admin2024 :
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপ মনপুরা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
বাংলাদেশের দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দ্বীপ হচ্ছে মনপুরা দ্বীপ। অন্য দ্বীপদেশগুলোর মতো জাঁকজমক না হলেও  প্রাকৃতিক শোভা থেকে মোটেই বঞ্চিত হয়নি এই দ্বীপটি। ২০০৯ সালে ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ভ্রমণপিপাসুদের নজরে পড়ে দ্বীপটি। দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসূত্র না থাকলেও তারা ছুটে গেছে এই দ্বীপ সৈকতে।এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক সেই মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।

মনপুরা নামের পটভূমি

দ্বীপের নাম কিভাবে মনপুরা হলো, সে নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে।

1
সংগৃহীত ছবি

অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া একটি অদ্ভুত গল্পও প্রচলিত আছে এ দ্বীপকে ঘিরে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতির মতো হিংস্র সব জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করত।

একদা মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থানবঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় ৩৭৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে জেগে আছে দ্বীপটি। বরিশালের ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন স্থলভাগটির তিন দিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভোলা জেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত মোট চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই মনপুরা উপজেলা। 

এর উত্তরের উপজেলার তজুমদ্দিন, দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া। পশ্চিমে রয়েছে তজুমদ্দিনের কিছু অংশ, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা।মনপুরা দ্বীপের বিশেষত্ব

মনপুরার আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে মাইলের পর মাইল সবুজ ম্যানগ্রোভ বন। দক্ষিণের চির সতেজ বনের চারপাশ ঘিরে আছে নদীর ঢেউ।

উপজেলা ঘুরে দেখার সময় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপজেলা পরিষদের ৫ দিঘি ও চৌধুরী ফিশারিজ প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি এখানকার বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। বিকেল থেকে শুরু করে রাত অবধি এখানে ভিড় হয় দ্বীপবাসী ও ভ্রমণপিপাসুদের।

2
সংগৃহীত ছবি

আলমনগর কেওড়া বনে নদীর পার ধরে ভিড় করা হরিণে পাল আলাদাভাবে মনপুরার প্রতিনিধিত্ব করে। জোয়ারের সময় হরিণগুলো মূল সড়কের একদম কাছাকাছি চলে আসে। কখনো এমন অবস্থা হয়, এদের নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

এ ছাড়া মনপুরার চরগুলো শীতের মৌসুমে বিচিত্র ধরনের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে। ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট ১০টি চর রয়েছে এই মনপুরায়। এগুলো হলো চর মুজাম্মেল, চর পাতালিয়া, চর নিজাম, চর পিয়াল, লালচর, চর শামসুউদ্দিন, ডাল চর, কলাতলীর চর ও চর নজরুল। 

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়

কুয়াকাটার মতো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। জনবসতির মাঝে দেখা যায় বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত পুকুর, যাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি নারকেলগাছ।

4
মনপুরা দ্বীপ। ছবি : সংগৃহীত

যারা সাইক্লিং করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই মনপুরা সেরা জায়গা। এ ছাড়া সবুজের সমারোহে ক্যাম্পিং করা যেকোনো হোটেলে রাত্রিযাপনের দারুণ বিকল্প হতে পারে।

এখানে মন ভরে ঘুরতে হলে আসতে হবে শীতকালে। কিছুটা শুষ্ক থাকায় ঠাণ্ডা মৌসুমে সাইক্লিং ও তাঁবু খাটানোর আনন্দটা পুরোটাই পাওয়া যাবে। পাশাপাশি সুযোগ থাকে বিরল সব অতিথি পাখি দর্শনের। অন্যান্য মৌসুমে, বিশেষ করে বর্ষার সময় এখানে আসার সমুদ্রপথটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

কিভাবে যাবেন

ভোলা শহরের স্থলভাগের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসূত্র না থাকায় এই দ্বীপে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন হচ্ছে লঞ্চ ও ট্রলার। এ জন্য প্রথমে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠতে হবে। লঞ্চগুলো প্রতিদিন বিকেল ৫টায় ছাড়ে এবং পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে মনপুরা পৌঁছে।

১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার এই দীর্ঘ যাত্রায় লঞ্চের ডেক ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০০ টাকা। নন-এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকার মতো এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রায়। এ ছাড়া আরো ভালো মানের কেবিনও রয়েছে। সেগুলোর জন্য আরো বেশি ভাড়া গুণতে হবে। ফেরার সময় সরাসরি ঢাকার পথ ধরতে হলে মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে দুপুর ২টার আগেই উপস্থিত থাকতে হবে। 

আরেকটি পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে বরিশালের ভোলা হয়ে যাওয়া। ঢাকা-টু-মনপুরা লঞ্চগুলো রাত ১২টার দিকে ভোলার জংশন ঘাটে থামে। এরপর থামে ইলিশা ফেরিঘাটে রাত সাড়ে ১২টায়, দৌলতখান ঘাটে রাত ২টায় এবং রাত সোয়া ৩টায় হাকিমুদ্দিন ঘাটে। শেষ রাতে পৌনে ৪টায় সরাজগঞ্জ ঘাটে ভেড়ে, আর সব শেষে ভোর পৌনে ৫টায় থামে তজুমুদ্দিন ঘাটে। এই ঘাটগুলোর যেকোনোটি থেকে মনপুরায় যাওয়া যায়।

তজুমদ্দিন ঘাট থেকে মনপুরা দ্বীপের উদ্দেশে সি-ট্রাক ছাড়ে প্রতিদিন বিকেল ৩টায়। পরদিন সকাল ১০টায় এটি মনপুরা থেকে ফেরার পথ ধরে। এ ছাড়া ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়াঘাট থেকে মনপুরার লঞ্চ আছে, যেটি জনতা বাজারে থামে। তবে এই পথটি এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আবহাওয়া প্রতিকূল থাকার কারণে বন্ধ থাকে।

5
হাজিরহাট। ছবি : সংগৃহীত

দ্বীপে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার উপায় হলো অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল, বোরাক ও সাইকেল। এক মোটরসাইকেলে পুরো দ্বীপ ঘোরার জন্য খরচ পড়তে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

মনপুরা দ্বীপে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা

এখানে রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে উপজেলা সরকারি ডাকবাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবন এবং কিছু বেসরকারি হোটেল। সরকারি ডাকবাংলো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবনে থাকার জন্য যথারীতি আগে থেকেই অনুমতি নিতে হবে। এগুলোতে বেশ স্বল্প খরচে রাত কাটানো যাবে। 

অন্যান্য হোটেলে রুম ভাড়া নিতে পারে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো। হাজির বাজার ও পুলিশ ফাঁড়ির পাশে পাওয়া যাবে মোটামুটি মানের বাজেট হোটেল। এখানে সিঙ্গেল রুম ১০০ টাকা, আর ডাবল রুম ২০০ টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। একটু ভালো মানের হোটেলের জন্য যেতে হবে বাজারের একদম শেষ প্রান্তে। সেখানে ৩০০ টাকায় সিঙ্গেল রুম এবং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ডাবল রুমের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

3
সংগৃহীত ছবি

এখানকার সেরা খাবার হচ্ছে মহিষের দুধের দই আর মেঘনার ইলিশ। এখানে শীতের সময় প্রায় সব হোটেলেই হাঁসের মাংস ভুনা পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো আছে বোয়াল, কোরাল ও গলদা চিংড়ির মতো দারুণ সব সামুদ্রিক খাবার।

মনপুরা দ্বীপে ভ্রমণকালীন প্রয়োজনীয় সতর্কতা

গত কয়েক বছর ধরে দ্বীপটি ভূমি ক্ষয়ের প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্ষাকাল এড়িয়ে শীতকালে এলেও দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই দ্বীপের বর্তমান অবস্থার কথা জেনে নিবেন। এ ছাড়া আরো কিছু সতর্কতা হচ্ছে—

  • নদী ভ্রমণের সময় সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিন।
  • ভ্রমণকালে যেকোনো বিষয়ে লেনদেনের আগে ভালোভাবে দরদাম করে নেবেন।
  • দলগতভাবে ভ্রমণে খরচ বাঁচে এবং নিরাপত্তাও জোরদার হয়। এরপরও অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগ নাম্বারগুলো সংগ্রহে রাখবেন।
  • পাশাপাশি স্থানীয় লোকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, এতে নানা বিপদে-আপদে তারা এগিয়ে আসবে।
  • দ্বীপের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে সতর্ক থাকুন। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যার ফলে প্রকৃতি ও দ্বীপবাসী উভয়ের ক্ষতিসাধন হয়। 

যেখানে জনস্রোতের কোলাহল থেমে যায়, সেখানে সরব হয়ে ওঠে প্রকৃতির কণ্ঠস্বর। এমনি নির্জনতায় তাঁবু থেকে সাগরের গর্জনে ঢাকা পড়তে পারে হরিণের পালের পায়চারির শব্দ। এর সঙ্গে ম্যানগ্রোভ বনের গাছের বৈঠকি সংগীত মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ ষোলো আনা পুষিয়ে দিতে পারে। তখন সাইকেলে চেপে পুরো দ্বীপ ঘুরতে গিয়ে সৈকতে চাকা আটকে যাবার বিরক্তিটাও সযত্নে তোলা থাকবে স্মৃতির মণিকোঠায়। বাড়ি ফেরার পর সে স্মৃতি তাড়না দিবে জানালার ওপারে দিগন্তরেখায় কোনো অর্ধচন্দ্রাকার ডিঙি নৌকা খোঁজার।

সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com